বাঘা রাজশাহী: দিন নেই, রাত নেই, প্রচার মাইকের এমন সু-খবরের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজশাহীর বাঘা পৌরবাসী। সম্প্রতি বাঘায় রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইকে মাইক লাগিয়ে যখন তখন, প্রাইভেট ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা, প্যাথলজি, ব্রয়লার মুরগীর মুল্য ছাড়, গরুর মাংস,এলইডি বাল্ব, ডিটারজেন্ট পাউডার, কিন্ডারগার্টেন, কোচিং সেন্টারে ভর্তিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচার মাইকের বিকট শব্দে অতিষ্ট পৌরবাসী।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই প্রচারের নামে মাত্রাতিরিক্ত ও অসহনীয় শব্দদূষণে নাকাল পৌরবাসী। প্রতিদিন ভোর পাঁচটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পৌর এলাকায় অবস্থান করে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে এসব মাইক বাজান হয়। এরুপ বিভিন্ন ধরনের প্রচার মাইকের বিকট শব্দে জনজীবন বেহাল অবস্থা। বিশেষ করে ছোট ছোট শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি ও পরীক্ষার্থীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে।
পৌর এলাকার চকছাতারী গ্রামের রবিউল ইসলাম(৬৫) বলেন, এভাবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে ভোগ্যপণ্য, চিকিৎসকের সেবা, মলম-মাজন-ইঁদুরের ওষুধ বিক্রি, গরু-ছাগল জবাইসহ নানা প্রচারণা চালানো হয়। ফলে রাস্তার পাশে বাড়ি হওয়ায় ঘুমের ব্যাঘাত হয়। মাইকের তীব্র বিকট আওয়াজে বুকের মধ্যে ধড়পড় করে।
বাজুবাঘা এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থী শারমিন বলেছে, শিঘ্রই এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। সন্ধাবেলায় মাইকের কর্কশ আওয়াজে পড়ার মনোযোগ নষ্ট করে দেয়, মাথা ধরে যায়।
বাঘা মুজিব চত্তর এলাকার হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী শরিফুল বলেন, ‘উচ্চ শব্দে রাত-দিন মাইকিং চলছে। মাইকিংয়ের আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। এতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি।
বাঘা বাজারের মুদি দোকানি ইসমে আজম বলেন, পৌর এলাকায় উচ্চ শব্দে রাত-দিন মাইকিং চলছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ক্লিনিকের নামে উচ্চ শব্দে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে কাস্টমারের সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলা যায় না। এসব বন্ধে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। মোবাইল কোর্টসহ কঠোর নজরদারি না হলে এই উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহনীয় মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত শব্দ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি কারক। মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণে শ্রবণশক্তি লোপসহ উচ্চ রক্তচাপ, মাথাধরা, খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তি বোধ, অনিদ্রা, হৃদযন্ত্রের সমস্যাসহ নানা রকম মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলের ওপরে হলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়।
উল্লেখ্য, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এ ‘নীরব, ‘আবাসিক, ‘মিশ্র, ‘বাণিজ্যিক ও ‘শিল্প এই পাঁচ এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধিমালায় নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবেল ও রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫, রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০, রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০, রাতে ৬০ ও শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫, রাতে হবে ৭০ ডেসিবেল।
শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এর ১৮ নম্বর ধারায় আরও বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বিধিমালার বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করে দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি প্রথম অপরাধের জন্য অনধিক এক মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
বিধিমালায় শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম না করার শর্তে মাইক, অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধানও আছে, কিন্তু বাঘায় মাইকিংয়ের ক্ষেত্রে এ বিধান মানা হয় না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদ আহম্মেদ বলেন, আধুনিক যুগেও প্রচারণার ক্ষেত্রে মাইকের ব্যবহার এখনও ব্যবসায়ীদের কাছে আস্থার প্রতীক। আর এ কারণে শব্দ দূষণ মাত্রারিক্তভাবে বেড়ে চলেছে। অতি উচ্চ মাত্রায় শব্দ দূষণের ফলে যে কোন বয়সী মানুষের শারিরীক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে শিশু ও হাইপার টেনশান রোগীদের মধ্যে এ ঝুঁকি বেশি।
উচ্চ মাত্রায় প্রচার মাইক ব্যবহারের বিষয়টি উপজেলা আইন-শৃংখলা মিটিং এ উপস্থাপন করা হয়েছে ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও ) পাপিয়া সুলতানা বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি । শব্দদুষন নিতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.